শ্রীমঙ্গল ভ্রমন ২০১৬

১৭ই নভেম্বর, ২০১৬ঃ
সকালে উঠলাম বোধহয় ন'টার দিকে। রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছিলাম। জানি,কালকে শিক্ষা সফর। জীবনে প্রথমবারের মতো পরিবার ছেড়ে বন্ধুদের সাথে স্কুল থেকে দূরে কোথাও যাচ্ছি, কিছুটা উত্তেজনা কাজ করছিলো ভেতরে ভেতরে।
উঠে পড়লাম, সকাল দশটায় কেমিস্ট্রি পড়া। গিয়ে দেখলাম, স্যার আসেনি, হাটা দিলাম সালেহিনের বাসার দিকে। 
বাসার সামনেই সবাইকে পেলাম, কমলা, লেবু আর যায়েদের হাতে ব্ল্যঙ্ক টিশার্টের বান্ডিল।
আর আমার আর রুদ্রোর কাজ ছিলো রাত সাড়ে তিনটার দিকে গিয়ে স্পীকার নিয়ে আসা :p
সন্ধ্যার একটু আগে প্রিন্ট শেষ হলো, আর গাট্টী গাট্টী টিশার্ট জড়ো হতে থাকলো সালের বাসায় :p
রাত দশটার দিকে টিশার্ট ডিস্ট্রিবিউশন শেষ হলো। 
এই টি  শার্ট প্রিন্ট করাতে গিয়েই সারাদিন চলে গেলো।
রাতে ঘুম হলোই না, রাত দেড়টার দিকে ঘুমালাম কিছুক্ষন।




১৮ই নভেম্বর, ২০১৬ঃ
ঘুম ভাংলো পৌনে চারটার দিকে। উঠেই মনে হলো রুদ্ররে ঘুম থেকে জাগানো দরকার। ফোন দিলাম, ধরলো।
"আমি আসতেছি খারা" :3
একটু পরে আবার রুদ্রের ফোন, তখন দাঁত মাজতেছিলাম :p
"হ্যালো নাইম, তোরা চলে যা, আমি আর তুরাবি আসতেছি বক্স নিয়ে"
"তোর ঘুম ভাঙ্গে নাই?"
"অ্যাঁ?"
"বাথরুমে যা"
"কে?"
"তুরাবি"
"ওঃ আমি নাইম মনে করসিলাম, আচ্ছা তুই পুলপার আয়"

রাত চারটায় পুরো রেডি হয়ে বের হলাম, আব্বা কিছুটা পথ এগিয়ে দিলো। পুলপার থেকে তিনটা সাউন্ড বক্স দুইটা রিকশায় উঠায় দিয়ে আমি আর রুদ্র রিক্সায় উঠলাম। ভালই ঠান্ডা, কুয়াশা কুয়াশা ভাব আর রাস্তা ফাকা। জীবনে প্রথমবার মাঝরাতে স্কুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার <3 (তখন একটু আধটু সিগারেট ফোঁকার বদভ্যাস ছিলো। বয়স কম, ফাঁকা রাস্তা পেয়ে সুযোগ কাজে লাগাইছিলাম,  ভোরের বাতাসে ক্লাস টেনের একটা ছেলে বিড়ি ফুকতেছে ভাবতেও হাসি পায়)
স্কুলে পৌঁছে বক্সগুলো যারযার বাসে দেয়া হলো। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ভীড় দেখে মনে হচ্ছিলো, রাতেও ক্লাস ঃভ
বাসে ডিউটি নিয়েছিলেন সুধীর স্যার। ১৬ তারিখ রাইসুল স্যার যখন বললেন, তোমাদের সাথে সুধীর স্যার যাবেন তখন অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিলাম -_- কিন্তু বাসে উঠার পর পুরো মেন্টালিটিই বদলে গিয়েছিলো।
বাস ছাড়লো ৫.১৫ দিকে। আমরা ছিলাম ৯ নাম্বার বাসে। ছেলেদের প্রথম বাস, আগের সব বাস মেয়েদের।
বাসে উঠেই প্রথম গান ছিলো "আমার পথচলা" <3 
বাসে স্পীকার বেশি সময় চলে নাই, মাঝ পথে পাকনামির ফলে স্পীকার ডেড :3 তারপরে গলার উপর ভরসা করে চলেছি বাকিটা পথ।
স্পীকারের উপর উঠে স্টেজ মতো ভাব করা :3 <3
আমরা নাচছিলাম কিছু গানের তালে যা কারো না শোনাই উচিত। এবং আমরা ক্রিয়েটিভ যেটা কারো জিজ্ঞেস করা উচিত নয়। যদি আমরা বলি কেনো আমরা ক্রিয়েটিভ তবে আমাদের একজন বন্ধু আর পাবলিকের সামনে আসবে না :3
 সবাই জানতে চায় রিমনের কি হইছিলো :3
হঠাৎ উঠে এলেন আলী মর্তজা স্যার, বললেন গান ধরো তোমরা।
"যখন আছে সাথে জাওয়াদ... "স্যারের সামনেই সমস্বরে "ফেন্সিডাইল" গাইলাম :3 স্যারের গানের লিরিক্স শুনে এক্সপ্রেশনটা সেই ছিলো :D
তারপর যখন গাওয়ার মতো গান ছিলো না, আমার আর জোগির "খাঁচার ভেতর অচিন পাখি" চলেছিলো, মর্তজা স্যার আর বাশার স্যারও গলা মিলিয়েছিলেন। বাসের ভেতর হয়েছে হকারগিরি :3 শামীম ভাইকে কপি করার চেষ্টা #মাজা_মবে_একসাথে (ধইন্নবাদ ফর ভ্যাগা'স (অপূর্ব) কন্ট্রিবিউশন )
সকালের নাস্তা সবার ৯টায় শেষ হলেও আমরা করেছি ১.৩০এ, হোটেল রাজমনিতে যখন প্রথম স্টপেজে আমাদের বাস থামানো হয়।
আবার বাসে উঠলাম আমরা, প্রায় ১১.৩০শে আমরা শ্রীমঙ্গলে স্পটে পৌঁছুলাম। গিয়েই যে আমার ২০টাকা মারা গেলো সেটা বলে দেওয়া লাগবে না, কারন ২০ টাকা খালি আমার না, অনেকেরই মারা গেছে। :3
আমার কখনও লটারির ভাগ্য নাই, তাই লটারিতে পারটিসিপেট করি না, তাই যেই টাকাই আমি লটারিতে ঢালি না কেন, সেটা মারা যায় :3
গলফ কোর্সের মাঠে


স্পটে গিয়েই আমাদের ঘোরা শুরু হলো। আমাদের স্পট ছিলো গ্র্যান্ড সুলতান গলফ কোর্স। অসাধারন জায়গা সেটা, একপাশে স্থানীয়দের গ্রাম, আরেকপাশে চা বাগান, আর আরেকপাশে বেশ কিছু টিলা, টিলার উপর রাবার বাগান আর মাঝে গলফ কোর্স। পুরোটায় ঘোরা সম্ভব হয়নি, যতটা পেরেছি, দেখেছি। :/
টিলায় ওঠাটা মজার ছিলো :) কেননা সত্যিকারের পাহাড়ে ওঠার মজা কখনই পাইনি, এইটাতেই অনেকটা একটু ধারনা পেয়েছিলাম।
অনেকের ৩৫ মিটার পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে যাবার অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে মনে হয় :3
একসাথে বসলাম পাশের গ্রামের চায়ের দোকানে, সেখানে চা-টা ভালো না লাগলেও সিঙ্গারা খারাপ লাগে নাই :D
গ্রামগুলো সুন্দর অনেক, রাবার বাগানের পাশে টিলার উপর ছোটো ছোটো গ্রাম।

Give me Common Sense
Give me some brain
Give me another chance
I'll bark and bark again :3

 উপরের চরণগুলো অপ্রাসঙ্গিক নয়, এটাও আমাদের মাঝের বহু গুনে গুণান্বিত জাওয়াদের লেখা বাচ্চালোনার প্রতি ট্রিবিউট :3 এবং এই গান আমরা স্পটে অনেক সময় গেয়েছি, এবং বাচ্চালোনার ফ্যানদের খুঁচিয়েছি :3
দুপুরের খাবার নিয়ে আমার বিস্তর অভিযোগ আছে, তবে What passed is past, কথা বলে লাভ নাই। -_-
দুপুরে ৩২ জন সহ স্যারদের সাথে খাওয়াটা উপভোগ করেছি অনেক :)
খাওয়া শেষে দই সমাচার :3

খাওয়ার পরে টিলায় বসে আড্ডা, গান, গফ নিয়ে খোঁচাখুঁচি সবই হয়েছে :D

কিন্তু শীতের দিনটা যেন অনেক তারাতারি চলে গেলো :(
বিকালে গলফ কোর্সের ভিউটা আমার অনেক ভালো লেগেছে, আসলে এরকম দৃশ্য সত্যই সচরাচর দেখা যায় না। :)
এরপর আমরা ফিরে গেলাম ঢাকায়, একদিনে আমরা জায়গাটার ১ পারসেন্টও দেখি নাই, তবে আবার যাবো শ্রীমঙ্গল :)
বিকালে বাসে উঠেই শুরু হলো নাচানাচি। বেস্ট ছিলো হাবিব স্যারের খোচা, "তোমরা তো নাচতেই পারো না, কি সব মরা মরা গান বাজাও, বাজাবা ইংলিশ বিট গান :p "
ঐ একটা খোঁচাই দরকার ছিলো, আর কানা নাহিদের বস্ত্রহরণ :3 শার্ট খুলে বাসের ভেতরে স্যান্ডো গেঞ্জি পড়েই সবাই নাচা স্টার্ট করে দিলো :p
বেস্ট ছিলো রিমন, খালি একটা হাফ প্যান্ট পড়ে লাফাইতেছিলো :3
মর্তজা স্যার আর জাকারিয়া স্যার এসেও নাচলেন আমাদের সাথে, অবশ্যই আমাদের মতো নয় :3
আমাদের সাথে গান গাইলেন সুধীর স্যার, হাবিব স্যার। বেস্ট ছিলো বাশার স্যারের ক্ল্যাসিক একটা বাংলা গান।  
জাকারিয়া স্যারের মোটিভেশনাল গল্পগুলোও বেস্ট ছিলো।
আর মোটিভেশনাল গল্পের মাঝে লিমনের কমেন্ট নিয়ে মর্তজা স্যারের কমেন্ট, “কিসব অশ্লীল ওয়ার্ড, ছেঁকা ফেঁকা ইউজ করো :3”
বেস্ট মুমেন্ট ছিলো, সবাই সিটে ঠাণ্ডায় কুকড়িয়ে বসে থাকা আর কেবিনের লাইট নিভিয়ে জাকারিয়া স্যারের ভুতের গল্প, বেস্ট :D
আর ডিজে ফয়সাল, সে দুইখানা সিট দখল নিয়ে ৩০ মিনিট ঘুমায় ছিলো উপরে দুই পা তুইলা দিয়ে, ভিডিও সেন্সরকৃত, পাবলিকে দেখানো যাবে না :3
আর কমল হা করে ঘুমাচ্ছিলো, তাকে আমরা ঘুমের মধ্যে বোতল মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বের করেছি, এবং এই কাজ ৩০ বার করার পরেও তার ঘুম ভাঙ্গে নাই :3
আমি আমার কথা একটু কই, লাস্টের ৪টা সিট দখলে নিয়ে ১৫ মিনিট ঘুমাইসি, হোটেল উজানভাটিতে নামার আগে, তখন চিল্লাচিল্লি শুনলাম,
 "রিমনের প্যান্ট খুজে পাওয়া যাচ্ছে না, সে একটা চাড্ডী পরে আছে" 
আমি সেই অবস্থা দেখার জন্য তাড়াহুড়া করে উঠতে গিয়ে সিট থেকে পড়ে পায়ের রগে টান খাইলাম -_- তারপর ১৫ মিনিট মাইনসের কাধে ভর দিয়া চলছি,  অনেকে নোটিস করেছে এটা।
(তখনই এক মেয়ের প্রেমে পড়ছিলাম, বাস থেইকা নাইমাই এদিক সেদিক খুইজা বেড়াইতেছিলাম সেই মুখ, মজার ব্যাপার এখনোও সে মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব আছে xD)
এবারের ব্রেক শেষ হতেই শুরু হলো নাচ গান, তাও বেজ বুস্টেড :D সুধীর স্যার পর্যন্ত চলে আসলেন নাচতে, আর হাবিব স্যারের ছেলে তো প্রিতম হাসানের র‍্যাপ পুরো ডুপ্লিকেট করে দিয়েছে। ভালো লাগসে পিচ্চির কণ্ঠে র‍্যাপ :D
নাচ গানের মাঝে জোগি রিমনরে যা করেছে, সেটা উহ্য থাক :3 তবে ভিডিও প্রকাশ হবে না, রিমন নিশ্চিন্ত থাকতে পারে :3

তবে বাসে খেলা হয়েছে, যখন অন্য সব বাস ঘুমায় গেছে, আমরা চিল্লায় জাগিয়ে দিয়েছি ;)
যখন ১৪ নাম্বার মোড়ে আসে গেলাম, অভির চিল্লানি "মুড়ির টিন, ঐ মুড়ির টীন"
বাগে পাইয়া আমরাও চ্যাম্পিয়ন বাসগুলারে  দিলাম পচানি :3
রাত ১১.৩০ এর দিকে আমরা পৌঁছুলাম স্কুলে। মজাটা কেবল মনে হচ্ছিলো, তারাতারি শেষ :/
 
চা বাগানে টিম ব্ল্যাক :p

প্রার্থনা 


The Amazing Class Incharge Teacher of class Ten



আমার এই লেখাটা লেখার সময় কাঁদতে ইচ্ছা করছে, কারন জানিনা, আবার কি দেখা হবে বন্ধুদের সাথে, থাকবো কি একসাথে? :'(
আনিকার কথাটা ছিলো, 'দোস্ত, এক বছর পর কে কোথায় যাই কে জানে... আছিই আমরা আর দুইটা মাস, একটা সেলফি থাক স্মৃতি হিসেবে'
আসলেই জীবন অনেক নিষ্ঠুর :/
তবে.....
.
.
.
.
.
We are Brothers, Sisters
We have come United Brotherhood :D 
We will be Together :D





Related Posts
Previous
« Prev Post

মোট পাতাদর্শিত