এটা কি মানবিক? শিক্ষকের প্রতি সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

পদোন্নতি ও ঘোষিত বোনাস চাওয়ায় শিক্ষকদের ব্যবহৃত টয়লেট বন্ধ করে দিয়েছেন মিরপুর ১৪ নম্বরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের পরিচালক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে প্রথমে টয়লেটের দরজা ভেঙে ফেলে পরে ইটের দেয়াল দিয়ে তা বন্ধ করে দেন পরিচালক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৫ বছর ধরে কলেজের কোনো শিক্ষকের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। ২০১৪ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কলেজ ভালো ফল করায় বোনাস ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। অদ্যাবধি তা দেওয়া হয়নি। এসব নিয়ে কলেজ ভবনের চতুর্থ তলায় শিক্ষকদের ব্যবহৃত টয়লেটের দেয়ালে কে বা কারা ‘বেতন দে তুই? বোনাস দে, প্রমোশন দে’ লিখে রাখেন। বেশ কিছু দিন আগে এসব লেখা হলেও গত ১৭ নভেম্বর কাজী বদরুজ্জামান নামের এক শিক্ষক লেখাগুলো মোবাইলে ভিডিও করে পরিচালককে দেখান। ওই ভিডিও দেখে মনিরুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘শিক্ষকরা হচ্ছে নর্দমার কীট। এদের টয়লেট ব্যবহার করতে হবে না। এটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখন থেকে শিক্ষকদের বেতনের বাইরে আর কোনো ভাতা দেওয়া হবে না।’ এর কিছুক্ষণ পর চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী এসে শাবল দিয়ে টয়লেটের দরজাগুলো ভেঙে ফেলেন। পরদিন ইট ও সিমেন্টের আস্তর দিয়ে আটকে দেওয়া হয় মূল দরজা। একই সঙ্গে পরিচালকের নির্দেশে শিক্ষকদের বিশ্রাম কক্ষের চেয়ারের পেছনে শিক্ষকদের নাম লিখে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়ে। এতে দেখা যায়, ১০-১২ জন শিক্ষকের নামে কোনো চেয়ার নেই। পরে অফিস আদেশের মাধ্যমে বিশ্রাম কক্ষে চেয়ারহীন শিক্ষকদের ক্লাস না থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের নজরদারির জন্য বারান্দা পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে পরিচালকের এ ধরনের কর্মকা-ের প্রতিবাদে এবং টয়লেটের দরজা খুলে দেওয়ার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার দুই দফায় ছয় ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন কলেজের মর্নিং এবং ডে শিফটের প্রায় দুইশ শিক্ষক।
এ বিষয়ে কথা বলতে মনিরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিক কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান বলেন, শিক্ষকদের বিশ্রামাগারের পরিবেশ সুন্দর করার জন্য টয়লেটটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন করার খবর সঠিক নয়।
কলেজ সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল পর্যন্ত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্তি আইজি সৈয়দ মনিরুল ইসলাম। বয়স শেষ হওয়ায় তার অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু কর্তৃত্ব বজায় রাখতে অনুগত এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করে কৃত্রিম সৃষ্ট পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় মনিরুল ইসলাম শিক্ষকদের ওপর কারণে-অকারণে চড়াও হন। অযথা বকাবকি, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি বন্ধ করে রেখেছেন তিনি।

সুত্রঃ


Related Posts
Previous
« Prev Post

মোট পাতাদর্শিত