মোবাইল ফোনের জগতে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির আগমন ঘটে ১৯৯২ সালে।
ওই বছর আইবিএমের সাইমন নামক একটি ফোনের মাধ্যমে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। এরপর ২০০৮ সালে বাজারে আসা আইফোনের মাধ্যমে টাচস্ক্রিন জনপ্রিয়তা পায়। আইফোন৩-এর হাত ধরে সাধারণ মানুষের মাঝে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির বিস্তার লাভ করে।
প্রকারভেদে টাচস্ক্রিন বেশ কয়েক ধরনের হলেও আধুনিক সময়ে রেসিস্টিভ ও ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
এর মধ্যে রেসিস্টিভের ব্যবহার অত্যন্ত কম। বেশির ভাগ ডিভাইস বিশেষ করে মোবাইল ফোনগুলোতে (উদাহরণস্বরূপ আইফোন) ক্যাপাসিটিভ টাইপ ব্যবহার করা হয়।
ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন পুরোটাই নির্ভরশীল আমাদের মানবদেহের ইলেকট্রিকাল ইমপালসের ওপর।
যদি আমাদের দেহ কোনো তড়িৎ চার্জ বহন না করত তাহলে ক্যাপাসিটিভ স্ক্রিনে টাচ করলে সেটা কোনো ফল বয়ে আনতে পারত না। একটি আইফোনের কথা বিবেচনা করা যাক, এটার দুই লেয়ারবিশিষ্ট স্ক্রিন থাকে। ওপরের লেয়ারটি আমরা সব সময় হাত দিয়ে স্পর্শ করি। আর এটার নিচে আছে আরেকটি লেয়ার। দুই লেয়ারের মাঝখানে আছে এয়ার স্পেস, যেটা ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে এবং এ দু’টি লেয়ার সব সময়ই পরস্পর বিপরীতধর্মী চার্জ বহন করে।
যখন আমাদের হাতের আঙুল ওপরের লেয়ার স্পর্শ করে তখনই অন্য লেয়ারগুলোর মধ্যে চার্জের আদান-প্রদান শুরু হয়। চার্জের আদান-প্রদান প্রক্রিয়া ও এদের মধ্যে সমতা বজায় রাখার জন্য অন্য একটি চার্জযুক্ত মাধ্যমের প্রয়োজন। এ েেত্র সেই তৃতীয় মাধ্যমটি হচ্ছে আমাদের হাতের আঙুল। আমরা যে চার্জ আদান-প্রদানের কথা বলছি, সেগুলো মূলত গ্রিড প্যাটার্নে (X I Y)ে সজ্জিত ইলেকট্রিক ফিল্ডের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। ইলেকট্রিক ফিল্ডকে ডিভাইস সেন্সরের মাধ্যমে মনিটর করা হয়, যেমনÑ আইফোন এবং আইপ্যাডের সেন্সর স্ক্রিন ওপরের দিকে অবস্থিত থাকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে, এই চার্জের আদান-প্রদানের জন্য আমাদের হাতের আঙুল বিশেষ কী ভূমিকা পালন করে?
আঙুল বহন করে অগণিত ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ। এই চার্জের উৎস আবার রক্তে বিদ্যমান নানা ধরনের রাসায়নিক আয়ন, যেমনÑ সোডিয়াম (NA+), কোরিন (Cl-), পটাসিয়াম (K+) ইত্যাদি থেকে। এখন ধরা যাক, স্ক্রিনের ওপরের লেয়ার ধনাত্মক চার্জে পরিচালিত। যখন আঙুল ওই লেয়ারকে স্পর্শ করে তখন লেয়ারের ধনাত্মক চার্জ আঙুলের ঋণাত্মক চার্জকে বেশি পরিমাণ আকর্ষণ করে ও ধনাত্মক চার্জকে দূরে ঠেলে দেয়। তার মানে আঙুলের এই ঋণাত্মক চার্জের আধিক্য লেয়ারে বিদ্যমান ধনাত্মক চার্জের সমতা রা করে। এ অবস্থায় মোবাইলের ব্যাটারি বেশি পরিমাণ ইলেকট্রন নির্গত করে, যেটা নিচের লেয়ারে ঋণাত্মক চার্জের আধিক্য তৈরি করে। তার মানে সবচেয়ে ওপরের লেয়ার ও নিচের লেয়ারের মধ্যে দু’টি বিপরীতধর্মী যথেষ্ট পরিমাণ চার্জের চলাচল শুরু হয়। আর এই পুরো প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার জন্য অবশ্যই লেয়ারগুলো পরস্পরের সাথে মিলিত হতে হবে, আর সেটা ঘটে আমরা যখন হাত দিয়ে স্ক্রিন স্পর্শ করি। যখন আমরা আঙুল উঠিয়ে ফেলি তখন ইলেকট্রিক ফিল্ড অদৃশ্য হয়ে যায় এবং কোনো চার্জের আদান-প্রদান ঘটে না। ঠিক এ কারণেই আমরা কেউ আমাদের হাতমোজা পরে টাচস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারি না, কারণ এটা চার্জের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। আর সেন্সরের কাজ হচ্ছে কী পরিমাণ ইলেকট্রন গ্রিড প্যাটার্ন দিয়ে চলাচল করছে সেটার হিসাব রাখা। যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ ইলেকট্রন গ্রিডের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে তখন সেন্সর সেটা বুঝতে পারে এবং মোবাইলের প্রসেসরকে সঙ্কেত দেয়। প্রসেসর আবার X I Y অরে স্থানাঙ্ক হিসাব করে ঠিক কোন বিন্দুতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে সেটা বের করে।
এখন আরেকটি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, যেটা নিয়ে সবার অনেক কৌতূহল থাকে। সেটা হলো আমরা স্ক্রিনের একটি বিশেষ জায়গায় চাপ প্রয়োগ করলে মোবাইল ফোনটি সে অনুযায়ী কিভাবে কাজ করে? যেমন কোনো বার্তা প্রেরণ করার জন্য সেন্ড বোতামে চাপ দিলে সেন্ড বোতাম কিভাবে বুঝতে পারে যে এখন কোনো বার্তা প্রেরণ করতে হবে? এ ব্যাপারগুলো আসলে আগে থেকেই ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমে প্রোগ্রাম করা থাকে। যখন কোনো অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন করা হয় তখন এর প্রসেসরে এ নির্দেশনাগুলো দিয়ে দেয়া হয়। অন্য দিকে টাচস্ক্রিন ডিভাইসে ব্যবহৃত চিপও বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়।
Source: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/31782
Tag: Touch Screen