আমাদের হাত জৈবিক, যান্ত্রিক নয় মন্ত্রিমশাই

এবার আরেক গুটির আবির্ভাব, ৭ খানা সৃজনশীল।
যখন থেকে আমাদের সৃজনশীল পদ্ধতির আবির্ভাব, তখন থেকেই আমরা ৬টি সৃজনশীল দিয়েই আসছি। এবার নাকি আমাদের পরানপ্রিয় শিক্ষামন্ত্রি নুরুল ইসলাম নাহিদ স্যার সুন্দর করে আমাদের ঘাড়ে আরেকটি বেশি সৃজনশীল চাপিয়ে দিয়েছেন।তাও একেবারে শেষ মুহূর্তে! যখন আমাদের এসএসসি পরীক্ষার আর মাত্র ৩টি মাস বাকি! এখন আমরা কিভাবে মাত্র ১০ মিনিট দিয়ে আরেকটি সৃজনশীল লিখবো যেখানে আমরা ২ ঘন্টা ১০ মিনিটেই ৬টা লিখতে গিয়ে কুপোকাত হয়ে যাই? অনেকেই সম্পূর্ণ উত্তর লিখতে পারে না, মুল বক্তব্য লিখে চলে আসে, এই সময়ের অব্যাবস্থাপনায় তারা তাদের গ্রেড পায় কম। আবার অনেক দুর্বল শিক্ষার্থী না লিখেই চলে আসতে বাধ্য হয়।
কিভাবে কেবল মাত্র ৪ মাসে আমরা ১০ মিনিটে একটা সৃজনশীল লেখার অনুশীলন করবো? এটা কি কখনো সম্ভব?

চিত্রগ্রাহকঃ তাহজীব ইসলাম জামি


এখন যদি কিশোরদের কিশোরীদের বর্তমানের আদর্শ মানুষটাও, প্রিয় মানুষটাও তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, এই অমানবিকতার পক্ষে থাকেন, তবে আমরা কি বলতে পারি?
আমার বন্ধু নাফসিন বিজ্ঞান কংগ্রেসে ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারকে কতগুলো প্রশ্ন করে,
ছিলো এইরকম,

নাফসিনঃ ২০১৭ সাল থেকে ৭ টা সৃজনশীল লেখতে হবে, এটা কি আপনি সমর্থন করেন?
মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ অবশ্যই সমর্থন করি।
নাফসিনঃ স্যার, এটা করার উদ্দেশ্য কি?
মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ আমি জানি না।(উনি না জেনেই সমর্থন করছেন)
নাফসিনঃ কিন্তু স্যার, আমাদের তো একটা প্রস্তুতির ব্যাপার আছে... আমরা সারাটা সময় ৬টা দিয়ে এসেছি, এখন শেষ মুহূর্তে এভাবে একটি বাড়িয়ে দিলে...
মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ ৭টা যা, ৭০০টা তা, ৭০০০টা তাই... একই

ভিডিও কনভারসেশন লিংক 

আরেকজন কিছু বলতেই উনি বলে বসেন, অভিযোগ করবে না,যা দিয়েছে তা মেনে নাও এবং লিখতে না পারলে পড়াশোনা ছেড়ে দাও।

কেনো? লিখতে না পারলেই পড়াশোনা ছেড়ে দেবো কেনো? আপনারা যা খুশি করবেন, আর আমরা মুখ বুজে সহ্য করবো? কেনো? আমাদের দোষ কি? আমরা কি আপনাদের অফিসে গিয়ে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন চুরি করে ফাঁশ করি? যেসব চুনোপুটি গুলো করে তাদের ধরেন... ধরে আমাদের হাতে ছাড়েন, দেখবেন আর প্রশ্ন চুরি যাবে না। প্রশ্ন চুরি যায়, ফাঁশ হয় আপনাদের মতো উঁচুদরের মানুশগুলোর বেখেয়ালিপনায়। যার ফলাফল আমরা ভোগ করি।




আরেকটা কথা ডিয়ার জাফর ইকবাল স্যার, আপনি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বোর্ড পরীক্ষক নন, আপনি জানেন না, আমরা কি পরিমান লেখার পর নাম্বার তুলি। আমরা কেবল মুল বক্তব্য লিখলে এবং কেবল মুল বিষয় লিখলে একটি উচ্চতর দক্ষতায় পাই ২ বা ৩। যেখানে আমরা আমাদের উত্তর দিয়ে ৪ এর মাঝে ৪ পাওয়ার যোগ্যতা রাখি সেখানে আমাদের ২ বা ৩ দেওয়া হয়। অনেক অমানুষের মতো শিক্ষক তো ইচ্ছেমত কম দিয়ে আবার খাতার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগগুলোয় পোষ্ট করেন।
আমরা অনেকটা বাধ্য হয়েই একটা ২০ লাইনের উত্তরের যায়গায় বেশি নাম্বারের আশায় রচনা লিখে ফেলি। সেখানে আমাদের সময় অনেক ক্ষেত্রেই কুলিয়ে উঠে না। এবং অনেকেই যে ৫টির পর লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে সেটা একটা ওপেন সিক্রেট।
এবং আমাদের এই সৃজনশীল শিক্ষা ব্যাবস্থা কখনই আমাদের সৃজনশীলতা বিকশিত করে না। হয়তোবা করে, আমরা বুঝতে পারি না 😁😁
তবে এই ৭টি সৃজনশীল কোনো সৃজনশীলতার বিকাশ নয়, বরং এটি আমাদের পরীক্ষার হলের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।




আমরা, মানে আমাদের এই এস এস সি ২০১৭ ব্যাচ যেনো সব কিছুর গিনিপিগ। আমাদের দিয়ে অংকে সৃজনশীল শুরু, JSC 2014
PSC শুরু আমাদের দিয়ে
এবার ৭টি সৃজনশীল শুরু আমাদের দিয়েই।
কেনো? আমরাই কেনো সবসময় এসব উদ্ভট শিক্ষানীতির শিকার?
 আমাদের হাত কিন্তু জৈবিক, যান্ত্রিক নয় মন্ত্রিমশাই 😒
আমরা এই অতিরিক্ত সৃজনশীল লিখবো না, আমাদের প্রথমেই জানালে হয়ত আমরা প্রস্তুতি নিতাম, শেষ মুহুর্তে কেনো? আমাদের পরের ব্যাচ থেকে সাতটি হোক। আপনাদের ভুলভ্রান্তির মাশুল আমাদের হাত কেনো দেবে?
আমরা এই ৭টি সৃজনশীল বয়কট করি।
আগামীকাল মিরপুর ১০ র‍্যালি এবং মানববন্ধন। ঠিক সকাল ১১.৩০ সময়ে, সকল শিক্ষার্থীকে স্কুল পোশাকে থাকার আমন্ত্রন জানাচ্ছি।

প্রথম প্রকাশঃ জিআর+, সেপ্টেম্বর, ২০১৬




Related Posts
Previous
« Prev Post

মোট পাতাদর্শিত