হিন্দি সিরিয়ালের স্ক্রিপ্ট এবং আমাদের আইকিউ!

বর্তমানে মা বোনদের কাছে ট্রেন্ড হল হিন্দি সিরিয়াল। একটা সন্ধ্যা যদি হিন্দি সিরিয়াল ছাড়া চলতে পারে, তবে ঘরে যেন নীরবতার শান্তি নেমে আসে।
আমি সিরিয়াল দুই চোখে দেখতে পারি না। এক নম্বর আজাইরা কারন, আমি একজন ছেলে, তাই কুটনামি সহ্য করতে পারি না। দেখলেই থাপড়ায় কালা পাটির সাদা দাঁত উপড়ায় দিতে মন চায়। হাজার হোক, বাপের টাকায় কেনা টিভি, তাই রাগ দেখাতে পারি না।
যে সিরিয়ালের কাহিনী আমরা মুখে সামারি বলতে লাগবে পনের কি বিশ মিনিট, এই চুলটারে টেনে টেনে পাঁচ বছরের প্যাঁচের কাহিনী বানাতে একজন স্ক্রিপ্ট রাইটারের লাগে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা। এটা আমার উর্বর মস্তিষ্কের উদ্ভট ক্যাল্কুলেশনের মাধ্যমে বের করা হয়েছে।
বলতেই হবে কিন্তু,হিন্দি বা ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের স্ক্রিপ্ট রাইটারেরা এবং ডিরেক্টরেরা জাদু জানেন, একেবারেই ম্যাজিকমণি তারা! 
কিভাবে কিভাবে তারা পাঁচ মিনিটের তারছেঁড়া গল্পগুলোকে মা বোনদের মাথায় ইঞ্জেক্ট করে দিচ্ছে। সত্যি! বুদ্ধি আছে বলতে হবে। বুদ্ধি না থাকলে এসব বুলশিট অন এয়ারেই যেতে পারত না। এখন কিনা এসব সারাক্ষন চালানর জন্য গোটা দশেক চ্যানেলই আছে! যেমন স্টার গলশা, জী? বাংলা :p ভবিষ্যতে এসকিউএলআই এর বদলে বলা হবে এইচএসআই (হিন্দি সিরিয়াল ইঞ্জেকশন)
আচ্ছা, আমি এলা এট্টু ক্ষান্ত দেই। আপনেই বলেন, গত আট দশ বছরে দেখা সিরিয়ালে কোনো নতুনত্ব পেয়েছেন কি? 
সব চুলই একরকম, একটার সাথে আরেকটার কোন ফারাক নেই। গ্রামে যায়, একটা মেয়ের সাথে বিয়ে হয়, শহরে আসে, আরেকটা বিয়ে জোর করে হয়। ব্যাস! দুই সতীনের গৃহযুদ্ধ এবং অতঃপর ইতিহাস। 
আমি মুল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কাহিনী গুলোর অ্যালগোরিদম দিয়ে যাই।

অ্যালগোরিদম নাম্বার একঃ
পয়সাওয়ালার ছেলে গ্রামে যাবে, কোনো মেয়েকে বিপদে পড়তে দেখে বা বিপদে পড়ে বিয়ে করে নিবে। সেই মেয়ের পরিচয় সে গোপন রাখবে। শহরে যাবে, আগে থেকে ঠিক করে রাখা পয়সাওয়ালার লাফাঙ্গা কন্যাকে বিয়ে করবে। বিয়ের পর সে সবার সামনে প্রথম স্ত্রীর পরিচয় দেবে (হারামি আগে দিবে না) তারপর দুই বউ নিয়ে থাকবে। একসময় এক বউ আরেক পুরুষের প্রেমে পাগল হয়ে গ্রুপ লিভ দিবে। #ঠুগ_জীবন

অ্যালগোরিদম নাম্বার দুইঃ
এই কাহিনী গুলোয় টুইস্ট আছে। টাইমিং টুইস্ট। এবং জিলাপির টুইস্ট! দেখা যাবে একটা গল্প চলছে। একটা মেয়ের তার বাবা মায়ের সাথের সুখি জীবনের গল্প। মেয়ের বিয়ে হবে। বিয়ের পরে সে হটাৎ জানতে পারে তার শ্বশুর তার জন্মদাতা পিতা :3 আবার জিলাপির প্যাঁচ খেয়ে ইউ, ভি ডাবলু সব টার্ন মাইরা কাহিনী কোনদিকে গেছে সেটা বোঝা আরেকটা আইকিউ টেস্ট।

ঐদিন আম্মা কী একটা সিরিয়াল দেখছিল। সেখানে এক স্বামী তার স্ত্রীকে ছেরে পালিয়ে বেরাচ্ছে, কারন সে মিথ্যা মামলায় ফেরারি আসামি। মামলার কারন সে তার সৎ মায়ের খুনি। কিন্তু সৎ মা ছদ্মবেশে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। পুলিশের চোখে ধোঁকা দিতে সৎ মা মরার অভিনয় করে হাসপাতালে স্ট্রেচারে মৃতের মতো অভিনয় পর্যন্ত করে। ঠগ হইল এখানে, পুলিশ কি লাশ ময়না তদন্ত করে না। করলে তো বুড়ি লাফ দিয়া উইঠা বসতো!
ফেরারি আসামি স্বামী বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতালে যায়। সেখানে স্ত্রীকে দেখে তার প্রেম জাগ্রত হয়......
ইতিহাস......
কিন্তু তার সৎ ভাই  হিডেন ক্যামেরা সেট করে রাখে বলে স্ত্রীর সাথের ছবি তোলা হয়ে যায় গোপনে। হিডেন ক্যমেরার ভিডিও যখন ভিলেন সৎভাই নাটকীয় ভঙ্গিমায় দেখাতে যায়, তখন দেখা যায়, দুই পয়সার হিডেন ক্যামেরাও ফোর কে রেজুলেশনে ছবি তুলতে পারে। আবার সেই ইন্টারেক্টিভ ক্যামেরা! এদিক সেদিক নরে চরে! যেদিকে টারগেট, সেদিকে ফিরে ফোকাস করে ভিডিও করে। -_-
সামনে জোরে জোরে আওয়াজ দিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, হাতের আইফোন দিয়ে তা ভিডিও করার বুদ্ধিটাও নেই।

আমাকে একটা জিলাপি দিবেন? খাই... খুব ঝাল তাই না???






Related Posts
Previous
« Prev Post

মোট পাতাদর্শিত